আমরা মসলা হিসাবে রান্নায় যে জিরা ব্যবহার করে থাকি সেই জিরা নানা ঔষধিগুণ সম্পন্ন। জিরার বৈজ্ঞানিক নাম Cuminum cyminum। সিরিয়া, তুরস্ক, চীন, ইরান, ভারতসহ হাতেগোনা ৫-৬ টি দেশে বেশি চাষ হয়। অক্টোবর, নভেম্বর মাস বীজ বপনের উত্তম সময়। বীজ বপনের ৯০-১১০ দিনের মধ্যে জিরা তোলা যায়। জিরা দেখতে অনেকটা গোলাকার লম্বাটে গঠন, আড়াআড়ি খাঁজ এবং হলুদাভ-বাদামি রঙের। খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করে এই জিরা। পেটের বিভিন্ন অসুখ কমানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতাও বাড়ায় জিরা। জিরায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক জিরার পানি খাওয়ার উপকারিতা।
জিরা পানির উৎপত্তি স্থল ভারতে। ভারতের উত্তরবঙ্গে এবং পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে ৪০ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা অতিক্রম করে। এই সময় তারা শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য জিরার পানি পান করতো। এছাড়াও রাতের খাবার কিংবা দুপুরের খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে পান করতো। সেখান থেকেই জিরা পানি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এটির নাম মূলত জল জিরা হলেও আমাদের দেশে জিরা পানি হিসেবেই বেশি পরিচিত।
জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে
জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফাইবার থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এটি রোগের সঙ্গে লড়াই করে এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
বহুমূত্র রোগীদের জন্য জিরার পানি অনেক উপকারী। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে আপনি এটি খালি পেটে পান করতে পারেন। এতে আপনার শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদনকে বাড়িয়ে দিবে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
জিরার পানিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি লবণের নেতিবাচক প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে
জিরা পানি শরীরের চর্বি হ্রাস করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে যার ফলে দেহের ওজন তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে
জিরা পানির আরও একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যাদের এ রোগ আছে, তারা দিনে দুবার সেবন করতে পারেন।
পেটের অম্লতা নিরাময়ে
জিরা পানি পেটের অম্লতা নিরাময়ে উত্তম ঔষধ হিসাবে কাজ করে। তাই জিরার পানি পান করুন ও পেটের অম্লতা থেকে মুক্ত থাকুন।
বমিভাব দূরীকরণে
জিরা পানি বমিভাব দূরীকরণে বিশেষভাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় জিরা পানি পান করতে পারেন।
ঠান্ডা-জ্বরের প্রকোপ কমায়
জ্বরের প্রকোপ কমাতে এক চামচ জিরা এবং অল্প পরিমাণ আদা, এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিন তারপর পানি ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। এই ছেঁকে নেওয়া পানি দিনে ২-৩ বার পান করুন। তাহলেই দেখবেন জ্বর বা ঠান্ডা জনিত কষ্ট কমে যাবে।
দেহের পানিশূন্যতা দূরীকরণে
জিরা পানি গরমকালে শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। জিরা পানি স্বাস্থ্যসম্মত, যা প্রাকৃতিক ভাবে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
অনিদ্রা দূরীকরণে
জিরা পানি সেবন করলে ভালো ঘুম হয়। যারা দীর্ঘদিন অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কিছুদিন জিরা পানি পান করুন। এতে ভালো ঘুম হবে। জিরা পানি ঘুমের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ বীজ।
দেহের দূষিত পদার্থ দূরীকরণে
জিরা পানি পান করলে যকৃতের ও পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী এবং জিরায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদান মায়েদের বাড়তি পুষ্টিতে উপকারী
জিরা পানিতে পর্যাপ্ত আয়রন বিদ্যমান থাকায় গর্ভবতী ও স্তন্যদান মায়েদের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। এটি বাচ্চার এবং মায়ের উভয়ের আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।