Blog
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এবং যেসকল উপকারিতা পাওয়া যাবে
ইসবগুলের ভুসি আমাদের সবার কাছে পরিচিত। সেই সাথে এর উপকারিতাও অনেক। কিন্তু আপনি কি এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন? আজ জানতে পারবেন কোন রোগের জন্য কি ভাবে ইসবগুলের ভুসি খেতে হয়। প্রথমে একটু জেনে নেই ইসবগুল সম্পর্কে। ইসবগুলের বৈজ্ঞানিক নাম "Plantago ovata"। এটি শীতকালীন ফসল এবং একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় এবং মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝে ফসল তোলা হয়। ইসবগুলের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার হয় এবং ফুল সাদা রঙের হয়। এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যে বেশি চাষ হয়। তবে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশও চাষ হয়।
ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এক টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
বেশির ভাগ মানুষ মনে করে ইসবগুলের ভুসি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন ইসবগুলের ভুসি আরো ৮-১০ টি রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী। যেমন ডায়রিয়া দূর করতে ,প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে, এবং মোটা মানুষের চর্বি কমাতেও ইসবগুলের ভুসি খুবই কার্যকরী।
আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি পানির সাথে মিশিয়ে সকালে পান করে, কেউ আবার লম্বা সময় ভিজিয়ে রেখে পান করে এই ভাবে যতই খান না কেন কোনো উপকারে আসবে না। আপনাকে জানতে হবে কি ভাবে খেলে কোন রোগের উপকার হয়। তাই আমরা আজ আলোচনা করবো ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি
আপনি জেনে অবাক হবেন ইসবগুলের ভুসি শরীরে জমে থাকা চর্বি কমিয়ে চিকনও করতে পারে। অর্থাৎ আপনি কোন রোগে কি ভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে ইসবগুলের কার্যকারিতা বা রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারটি।
ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অতি উত্তম একটা পদ্ধতি রয়েছে। এটি খেলে লম্বা সময় পেট ভরা থাকবে ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা টাই কমে যাবে। যদি আপনি স্লিম হতে চান তাহলে কুসুম গরম পানির সাথে দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভাত খাওয়ার আগে খেয়ে নিন। অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠেও দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি এক ক্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলেও কিন্ত ওজন কমবে। ওজন কমানো শরীর থেকে চর্বি ঝরানো অবশ্যই গরম পানি এবং লেবুর রসের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে হবে। এতে পাকস্থলী পরিষ্কার হবে এবং শরীর থেকে চর্বি কমবে।
পাকস্থলীর অম্লতা সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি
অম্লতা প্রতিরোধে বেশির ভাগ মানুষই এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু ইসবগুলের ভুসি খেয়েছেন বলে আমি জানি না। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরপরই এটি আমাদের পাকস্থলীর ভিতরে গিয়ে একটি প্রতিরক্ষা মূলক ত্বক তৈরি করে, যা অম্লতা সমস্যা সহ পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
অম্লতা কমানোর জন্য খাওয়ার পর দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি আধা ক্লাস ঠান্ডা পানিতে অথবা দুধে মিশিয়ে পান করুন। এক্ষেত্রে দুধ এবং পানি এক সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দুরহ রোগ আর এই রোগ অনেক ভয়াবহ পর্যায় পৌঁছায়। তবে ইসবগুলের ভুসি আপনাকে কয়েক দিনের মধ্যেই এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে খাওয়ার পরিমাপ এবং পদ্ধতিটাই কিন্তু এখানে মুখ্য বিষয়। দেখুন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি পাকস্থলীতে গিয়ে ফুলে ভিতরের সব বর্জ্য বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে জলগ্রাহী হওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে উপকার বেশি পাবেন।
ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা
অবাক লাগলেও এটি সত্যি যে ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুটি রোগের এক সাথে কাজ করতে পারে। যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে দুধ অথবা পানির সাথে নয় তখন খেতে পারেন টকদইয়ের সাথে মিশিয়ে এতে উপকার বেশি পাবেন। টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে এবং ইসবগুলের ভুসি তরল মূল কে শক্ত করতে সাহায্য করে খুব কম সময়ে।
ডায়েরিয়া প্রতিরোধে তিন চামচ টকদইয়ের সাথে দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেয়ে নিন। এভাবে দিনে দুই বার খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে ইসবগুলের ভুসি
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে অনেকের মাঝেই। তাদের জন্য উপকারী একটি খাবার হলো ইসবগুলের ভুসি। এটি নিয়ম করে খেলে কমবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি সকাল ও বিকালে খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
শরীর কে চাঙ্গা রাখতে ইসবগুলের ব্যবহার
এবার আসা যাক আপনি যদি খুব রোগা হয়ে থাকেন তাহলে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন। কেননা ইসবগুলের ভুসি হজমে সহায়তা করে এবং খাদ্যের রুচিকে বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ আপনি যদি কম খেতে পারেন খাবারে যদি রুচি না থাকে, হজমে সমস্যা থাকে, স্বাস্থ্য ভেঙে যায় তাহলে সেটির সমাধান করতে সাহায্য করে ইসবগুলের ভুসি।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আগে দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ইসবগুলের ভুসি দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রেখে কখনোই খাবেন না সর্বোচ্চ সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট এর মাঝেই ইসবগুলের ভুসি খেয়ে নিবেন।
ইসবগুলের ভুসি কখনোই খোলা অবস্থায় কিনবেন না অর্থাৎ প্যাকেট জাতীয় ইসবগুলের ভুসি কিনবেন, ইদানিং বাজারে যেসমস্ত গন্ধযুক্ত অর্থাৎ ফ্লেভার মেশানো ইসবগুলের ভুসি পাওয়া যায় সেগুলো ভুলেও কিনবেন না। গন্ধ মুক্ত এবং প্যাকেট জাতীয় ইসবগুলের ভুসিতে সঠিক উপকার টি পাবেন। বুঝে শুনে একটু ভালো মানের গুলো কেনার চেষ্টা করবেন দাম যদিও একটু বেশি হয়।
আরো জানুন সুপারফুড স্পিরুলিনা এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম