অতিরিক্ত কোনো কিছুই যেমন ভালো না, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ওজনও ভালো না। অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রোগের শঙ্কা। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে ফিট মেয়েদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের মেয়েদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৬৬ শতাংশ থাকে। অনেক মেয়ের শারীরিক, মানসিক ও হরমোন জনিত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এই অতিরিক্ত ওজনের কারণে। এই পোস্ট সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন কীভাবে মেয়েদের ওজন কমানো যায়।
খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ডায়েট করে যেভাবে ওজন কমাতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
অনেকে পানি পান করতে চান না। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খাওয়ার আগে পানি পান করা। এ জন্য চেষ্টা করুন, কাছে সব সময় একটি পানির বোতল রাখার জন্য এবং একটু পরপর পানি পান করার চেষ্টা করুন। এতে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ক্যালরি ঝরাতে সহায়তা করে।
ব্ল্যাক কফি
অনেক মেয়েই চিনিযুক্ত কফি খেতে পছন্দ করেন, যা অতিরিক্ত ওজন হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। তাই এসব কফি পরিহার করে ব্ল্যাক কফি খেতে পারেন। কারণ, এতে আছে দ্রুত ওজন কমানোর সক্রিয় উপাদান। এটি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের চর্বি কমাতে দারুণভাবে কাজ করে।
রোজা
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা রোজা হলো একটি না খাওয়ার প্রক্রিয়া, যেখানে খাওয়ার একটি চক্র অনুশীলন করতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিরতিহীন রোজা রাখার চেষ্টা করেছেন, তারা ওজন কমাতে সফল হয়েছেন। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে রোজা রাখতে পারেন। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেবু পানি
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে শুধু লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে এই কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে চর্বি ঝরে গিয়ে আপনাকে স্লিম বানাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
আঁশযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে আঁশযুক্ত খাবার গুলো হলো কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগা শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। এসব খাবার পানি ও তেল শোষণ করে আমাদের হজম প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার
অতিরিক্ত ওজন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে পাউরুটি, সফট ড্রিংকস, আলু, দুধ, বিস্কুট প্রভৃতি এবং বিভিন্ন ধরনের শস্য ও চিনি। এগুলো শরীরে অনেকটা মেদ বাড়িয়ে দেয়।
নিয়মিত ব্যায়াম, শরীর চর্চা বা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে
হাঁটা
হাঁটা মহিলাদের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য একটি জনপ্রিয় ওয়ার্কআউট। এই ব্যায়াম মহিলারা প্রায় যে কোনও জায়গায়, যে কোনও সময় করতে পারেন। তাজা বাতাস এবং ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্যেও হাঁটা একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম। চাইলে বাসায় ট্রেডমিল ব্যবহার করতে পারেন। দিনে 30 মিনিট হাঁটা মহিলাদের ক্যালোরি পোড়াতে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
জগিং বা দৌড়ানো
জগিং বা দৌড়ানো মহিলাদের আরেকটি চমৎকার ওজন কমানোর ব্যায়াম। এটি হাই-ইম্প্যাক্ট ব্যায়াম এবং দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। বাড়ির বাইরে, কোনো পার্কে বা রাস্তার পাশদিয়ে দৌড়াতে পারে। 10-15 মিনিট জগিং দিয়ে শুরু করতে পারে এবং তারপর ধীরে ধীরে সময় এবং দূরত্ব বাড়াতে পারে।
বডি ওয়েট ব্যায়াম
বডি ওয়েট ব্যায়াম, রেসিস্ট্যান্স ব্যান্ড বা ডাম্বেল ব্যবহার করে হাই-ইনটেন্সিটি ট্রেনিং করা যেতে হয়। এই ব্যায়ামগুলির মধ্যে আছে স্প্রিন্ট, জাম্প স্কোয়াট এবং পুশ-আপ। হাই-ইনটেন্সিটি ট্রেনিং থেকে সর্বাধিক লাভের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। হাই-ইনটেন্সিটি ট্রেনিংয়ের ফলাফল পাওয়ার জন্য ডেডিকেশন এবং ধারাবাহিকতা খুব জরুরী।
একটি সাপ্তাহিক ওয়ার্কআউট সময়সূচী তৈরি করা
মহিলাদের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর ওয়ার্কআউট প্ল্যান শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও প্রভাবিত করে। ওয়ার্কআউট সময়সূচী তৈরি করা এবং নিয়মিত অভ্যাস করা ও ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ওয়ার্কআউট রুটিন এবং সময়সূচী লিখে রাখা সবসময়ই ভালো।
ঔষধ সেবনের মাধ্যমে
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে যা দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু এই ধরনের ঔষধ ব্যবহারে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাই এই গুলো সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। ঔষধ সেবনে ফলে হজম শক্তি উন্নতি করে, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরের চর্বি কমায় সেই সাথে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
এই উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বমি বমি ভাব হওয়া, মাথা ঘোরানো, অনিদ্রা এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি প্রভৃতি। তবে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ না করলে প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দিতে পারে।