সজনে বা মরিঙ্গা আমাদের নিকট একটা জনপ্রিয় সবজি। সজনের বৈজ্ঞানিক নাম (Moringa oleifera)। এটার উৎপত্তি স্থল ভারত উপমহাদেশে হলেও এটা এখন সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। একে পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব বলা হয়। এটাতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল থাকে। এই মিনারেল গুলো আমাদের শরীরে সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। ম্যাগনেসিয়াম জিংক পটাশিয়াম এছাড়াও আমাদের শরীরে অনেক হরমোন থাকে যা মরিঙ্গা বা সজনে পাতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যারা ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা হাইপার টেনশন রোগে ভুগছেন তাদের জন্য সজনে পাতার গুঁড়ো খুবই উপকারি।
আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ন্যাচারাল এই সজনে পাতার গুঁড়ো প্রতিদিন এক চা চামচ করে খেতে পারেন। যাদের হাত পা জ্বালা পোড়া করে ত্বক নষ্ট হয়ে যায় বা ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা সজনে পাতার গুঁড়ো পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে এটা অনেক ভাবে খেতে পারবেন।
সজনে পাতার উপকারিতা
গবেষকরা সজনে পাতাকে নিউট্রিশন্স সুপার ফুড বলে থাকেন। এটার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমারদের শরীরের, মানসিক এবং যৌন সহ বিভিন্ন দিক সহযোগিতা করে থাকে।
এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হল একটি শরীর বৃত্তীক প্রতিক্রিয়া যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের টিস্যুর ক্ষয় ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার করে। সজনে পাতায় থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ সহ বিভিন্ন প্রতিরোধকারী পুষ্টি রয়েছে। একটি গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে মরিঙ্গায় পাওয়া এই উপাদান গুলি দীর্ঘস্থায়ী রোগের উপশম করতে সহায়তা করে।
পুষ্টি গুনে ভরপুর এই সজনে পাতায়
সজনে পাতা এত পুষ্টি সমৃদ্ধ যে দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে। আমরা গাজরকে সবাই চিনি এটা আমাদের অনেক প্রিয় একটা খাবার, কিন্তু এই গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে এই সজনে পাতায়। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে আমরা জানি কিন্তু এর চেয়েও তিন গুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান রয়েছে।
সজনে পাতা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে
এই ভোজ্য উদ্ভিদ আপনার রক্তের শর্করাকে আরও ভালোভাবে স্থিতিশীল রাখতে পারে। মরিঙ্গায় থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং আইসোথিওসায়ানেটসের জন্য রক্তের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এটি আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
মরিঙ্গা বা এর মতো উদ্ভিদের নির্যাস যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। মরিঙ্গায় থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিন প্রোফাইলের কারণে জ্ঞানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
শরীরের শক্তি বাড়াতে সজনে পাতা
আপনি যদি ক্যাফিন-মুক্ত শক্তি বৃদ্ধির খাদ্য সন্ধান করে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার সকালের রুটিনে মরিঙ্গা বিবেচনা করতে পারেন। এটি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ, বিশেষত আয়রন, ভিটামিন সি, ডি এবং শক্তি-উৎপাদনকারী পুষ্টি রয়েছে। এছাড়াও মরিঙ্গাতে ভিটামিন বি রয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদী শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বককে করে উজ্জ্বল। এটি ব্যবহারের ফলে বয়সের ছাপ এবং পিগমেন্টেশন দূর করে সেই সাথে এটি ব্রণ বা পিম্পল প্রতিরোধ করতেও দারুণভাবে সহায়ক। এছাড়াও সজনে পাতার গুঁড়ো ব্যবহারে ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি হয়, যা পোরের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
"সতেজ মন্ত্র" নামের একটি ন্যাচারাল প্যাক রয়েছে যার প্রধান উপাদান হলো মরিঙ্গা বা সজনে পাতা গুঁড়ো, এটি আপনার ত্বকের বলিরেখা, ব্রণসহ ত্বকের বিভিন্ন দাগছোপ দূর করতে সাহায্য করে।
এছারাও আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন
- যাদের ওজন বেশি তাদের শরীরের ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।
- সজনে পাতায় প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।
- এই পাতা সেবনের মাধ্যমে আপনার হার্ট ভালো রাখেতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেবে।
- এটি রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
- যাদের হজমের সমস্যা তাদের কোলেস্টেরলের লেভেল কমিয়ে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- এছাড়াও ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলাইটিস এবং জন্ডিসের সময় ব্যাপক ভাবে কার্যকরী এই সজনে পাতা।
মরিঙ্গার কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
মরিঙ্গা একটি শক্তিশালী উদ্ভিদ এবং বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে, কিছু লোক পেট খারাপ, পেটে ব্যথা বা অন্যান্য হজম সংক্রান্ত সমস্যা অনুভব করতে পারে। যাদের লিভারের সমস্যা আছে, রক্তের শর্করার পরিমাণ খুবই কম থাকে তাদের জন্য মরিঙ্গা খাওয়া এড়িয়ে চলা উত্তম কারণ মূল, বাকল এবং ফুলে পাওয়া রাসায়নিকগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে।
কিভাবে মরিঙ্গা পাউডার ব্যবহার করবেন
মরিঙ্গা বহুমুখী খাবার থেকে শুরু করে স্ন্যাকস এবং পানীয়তেও বিভিন্ন রেসিপিতে যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। এটাকে চাইলে ভর্তা করে খেতে পারে বা সবজি আকারে খেতে পারে। অনেকে এটাকে সস হিসাবে খেতেও অনেক পছন্দ করেন। সজনের গুঁড়ো রান্নায় মসলা হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার রান্নায় আলাদা একটা স্বাদ যুক্ত হবে। এটার ডাটা অনেকে ডাল হিসাবে রান্না করে খেয়ে থাকে।