শিলাজিৎকে পর্বত বিজয়ী বা দূর্বলতা ধ্বংসকারী বলে সেইসাথে একে ক্ষয় নিবারকও বলা হয়। বেশিরভাগ সময় মানুষ নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরণের সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন যেমন মাল্টিভিটামিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এগুলো সেবন করা খারাপ নয় তবে স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত এই সমস্ত ঔষধ বাদ দিয়ে এক টুকরো শিলাজিৎ সেবন করলে যদি আমাদের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত সমস্যা গুলো সমাধান হয়ে যায় তাহলে কেমন হয় ? হ্যাঁ, শিলাজিৎ এমন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। শিলাজিৎ দেখতে কালচে বাদামি রঙের হয় এবং খেতে তেতো হয়ে থাকে।
শিলাজিৎ -এ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হিউমিক অ্যাসিড এবং ফুলভিক অ্যাসিড থাকে। এ ছাড়াও থাকে সেলেনিয়াম-সহ একাধিক রাসায়নিক উপাদান। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও ফুলভিক অ্যাসিড কে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, ইরান, মঙ্গোলিয়া এবং পেরুর দক্ষিণের পাহাড়গুলিতে শিলাজিৎ পাওয়া যায়।
শিলাজিৎ এত দামি হওয়ার রহস্য কি?
শত ভাগ খাঁটি শিলাজিৎ এর দাম কেজি প্রতি এক লক্ষ টাকা। এটি এত দামি হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেন না শিলাজিৎ সংগ্রহ আর তৈরির পদ্ধতি কিন্তু বেশ জটিল এবং কঠিন। মূলত এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় পাহাড়ে পাওয়া যায় এই শিলাজিৎ। পাহাড়ে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জন্মায় যেমন ইউফোরবিয়া, ট্রাইফোলিয়াম, মস, লতা গুল্ম, স্যাকুলেন্ট এবং বেশ কিছু শেওলা। এই সব বিশেষ গাছ মরে গেলে অনুজীবিদের দ্বারা ধীরে ধীরে পচতে থাকে, এই পচনক্রিয়া কয়েক যুগ ধরে চলার পর পাথরে শিলাজিৎ জমা হতে থাকে এবং পাথরের গায়ে শক্তভাবে আটকে যায়। তবে মে-জুলাই মাসের গরমে জেলির মত আকার ধারণ করে পাথরের গা বেয়ে নিচের দিকে পরতে থাকে।
এটি খুঁজে বের করা আর সংগ্রহ করা রীতিমত ঝুঁকির। পাহাড়ের গা থেকেই কেটে নেওয়া হয় পাথর সমেত। অনেক সময় ঝুলন্ত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটি সংগ্রহ করে স্থানীয়রা। তারপর গরম পানিতে পাথর সমেত ফুটিয়ে পাথর থেকে শিলাজিৎ আলাদা করা হয়। সেই পানি ছেঁকে আবারও ফোটানো হয়। তরল থেকে পানির পরিমাণ শুঁকিয়ে কিছুটা শক্ত আকার ধারণ করলে এটা বাজার জাতকরণের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।
শিলাজিৎ এর উপকারিতা
- শিলাজিৎ পানিশূন্যতা জনিত সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভাবে কার্যকরী। যাদের পানিশূন্যতা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
- কিছু আধুনিক গবেষণা থেকেও দেখা যাচ্ছে শিলাজিৎ টেস্টেস্টেরন যেমন বাড়ায় তেমনি শুক্রানুর সংখ্যা ও চলনক্ষমতা বাড়ায়। ফলে বুঝতেই পারছেন শিলাজিৎ আপনার দাম্পত্য সুখকে কতটা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- এটি শরীরের বিভিন্ন রকম আলসার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সাহায্য করে।
- শিলাজিৎ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
- এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এছাড়াও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী।
- এছাড়াও ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
- শিলাজিৎ অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কাজ করে।
- শিলাজিৎ শরীরে টনিকের মত কাজ করে যার ফলে এটি অন্ত্রের পেশীগুলিকে শক্ত করে হজমে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে খাদ্য নিষ্কাশন করে কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে মুক্তি দেয়।
- এটি অন্যান্য ঔষধের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে পারে , ফলে যে কোন রোগ নিরাময়ে শিলাজিৎ পজেটিভ ভূমিকা রাখে।
শিলাজিৎ খাওয়ার নিয়ম
ভালো ফলাফলের জন্য এটি নিয়ম করে এক মাস, প্রতিদিন এক গ্রাম করে মাসে ত্রিশ গ্রাম। যদি সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে এক থেকে দুই মাসের ব্যবধানে আবারো খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে দিনে এক গ্রামের বেশি নয়। এটি বাজারে ক্যাপসুল, গুঁড়ো, জেলির মতো বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। যেহেতু এটি খেতে তেতো তাই দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন আবার শুধু জলে মিশিয়েও খেতে পারেন।
আরো জানুন ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এবং যেসকল উপকারিতা পাওয়া যাবে