আমলকী একপ্রকার ভেষজ ফল। মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির কল্যাণে দুনিয়ায় অগণিত জিনিস সৃষ্টি করেছেন। এরকম কোটি কোটি সৃষ্টির মধ্যে মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী ও ঔষধি গুণে ভরপুর একটি ফলের নাম আমলকী। আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus Emblica। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও চীনে আমলকীর গাছের বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সব এলাকাতেই আমলকীর গাছ দেখা যায়।
আমলকী ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি, ব্যাস ১/২ ইঞ্চি এর কিছু কম বেশি হয়ে থাকে। আমলকী মার্চ-মে মাসে ছোট ছোট হলুদাভ ফুল দেখা যায় এবং ফল পাকে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশী। বিভিন্ন অসুখ নিরাময় ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে আমলকীর ভূমিকা অসাধারণ। চলুন জেনে নেই আমলকীর বিভিন্ন পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে।
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা
দাঁতের মাড়ির রোগ দূরীকরণে
স্কার্ভি রোগটি দাঁতের একটি পরিচিত সমস্যা। এই রোগের মূল কারণ হলো শরীরে ভিটামিন 'সি' অভাব। স্কার্ভি রোগে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে, মাড়িতে ঘা হয়, শরীর দুর্বল হয় এছাড়া আরো নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে যদি প্রতিদিন ১-২টি আমলকী খাওয়া হয়, তাহলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব কেন না আমলকীতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি'।
পেটের অম্লতা চিকিৎসায়
পেটের অম্লতার সমস্যা ভোগ করেন নি এমন লোক খুঁজে বের করা কঠিন। আমরা প্রায় সবাই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। নিয়মিত আমলকী খেলে পেটের অম্লতা দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায়
আমলকীতে সলিউবল ফাইবার থাকে। এটি শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে এবং হজমে সাহায্য করে। এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে
আমলকীতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া চোখ লাল হওয়া, চুলকানো ও চোখ দিয়ে পানি পড়া রোধেও এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে
আমলকীর গুঁড়োর সাথে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে তা গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে
উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকিকে অনেক বৃদ্ধি করে দেয়। আমলকী খেলে তা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে ধমনীর ব্লক খুলে দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে।
বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে আমলকী
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকীতে পলিফেনল রয়েছে যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীর রক্ষা করে। এটি শরীরে ইনসুলিন শুষে নিতে সাহায্য করে যা বহুমূত্র রোগের উপশম হিসেবে কাজ করে।
রক্ত পরিষ্কার করতে
রক্ত পরিষ্কার করতে আমলকী বেশ কার্যকর। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়।
চুলের যত্নে ও খুশকির সমস্যা দূর করতে
আমলকী চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকী খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে, চুলকে খুশকি মুক্ত ও কম বয়সে চুল পাকা রোধে আমলকী বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভারতে একটি গবেষণা (Inhibition of growth of dermatophytes by Indian hair oils) করা হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চুলে নানা রকম প্যারাসাইট বেড়ে ওঠে। যেগুলো চুলের জন্য খারাপ। এই পরজীবীদের ধ্বংস করার জন্য ও চুল ভালো রাখতে আমলকী সব থেকে বেশি কার্যকরী।
আমলকী গুঁড়ো খাওয়ার নিয়ম
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ আমলকী গুঁড়ো মিশিয়ে জুসের মতো খাওয়া যায়।
- আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন। এছাড়া এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। পেটের অম্লতার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- আমলকী গুঁড়ো, ডিমের সাদা অংশ, নারিকেল তেল এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে করে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে।