Blog
কেন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে চিয়া সিডে? কি আছে এতে?
নানান ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ ‘চিয়া সিড’ এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘সালভিয়া হিসপানিকা’। এই মূল্যবান ফসল মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বেশি চাষ হয়। চিয়া সিড ডিম্বাকৃতি ও ধূসর বর্ণের সাথে কালো এবং সাদা দাগযুক্ত এবং ব্যাস প্রায় ২ মিলিমিটার (০.০৮ ইঞ্চি)। বীজগুলি তরল শোষক, যা ভিজে যাওয়ার পরে কয়েক গুণ ওজন বেড়ে যায়। বেলে দোআঁশ মাটিতে এই ফসল ভালো জন্মে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চিয়ার বীজ রোপন করা হয় এবং মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ফসল তোলা যায়। চিয়া বীজ রোপনের ৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। ১২০ দিনের মধ্যে এটি সংগ্রহ করা যায়। এই গাছ 3 ফুটের একটু বেশি উচ্চতায় পৌঁছায় তবে রোপনের তারতম্যের ফলে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে।
পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে সুপারফুড নামে বলে থাকে কেন না এটা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- দিনে ১/২ চা চামচ চিয়া সিড শরীরের শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
- এতে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকায় এটি গ্রহণে ক্ষুধা কম লাগে।
- কোলন পরিষ্কার রাখতে চিয়া সিডস খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- এতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- এতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের সুস্থতার জন্য বেশ উপকারী।
- মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।
- এটি রক্তে চিনির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখে বলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
- এটি সেবনের ফলে পেটের প্রদাহজনিত বা গ্যাসের সমস্যা দূর করে এবং হজমে সহায়তা করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় চিয়া সিড দারুণ কাজ করে। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম।
- এটি শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দিতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত চিয়া বীজ সেবনে হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়।
- এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে এবং এর পাশাপাশি এটি অ্যান্টি এজিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরো জানুন সজনে পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
যে ভাবে খেতে পারে এই সুপারফুড চিয়া সিড
- চিয়া সিড স্বাদ ও গন্ধবিহীন একটি খাবার। এটা খাওয়ার জন্য রান্না করারও দরকার হয় না। পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খাওয়া যায় চিয়া সিড।
- চাইলে ওটস, পুডিং, জুস, স্মুথি ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নেয়া যায়। এ ছাড়া কেউ চাইলে টকদই, রান্না করা সবজি বা সালাদের ওপরে ছড়িয়েও খেতে পারেন।
- চিয়া সিড নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে এটা সব ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।
- চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিডসহ পানীয়টি পান করুন।
- চাইলে স্মুথি বানিয়ে খাওয়া যায়। টক দই, চিয়া সিড ও শসা দিয়ে স্মুথি বানিয়ে বিকেলে নাশতা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে এই সুপারফুডটি।
- ২ কাপ নারকেলের পানির সঙ্গে পছন্দের ফলের রসের সঙ্গে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ চিয়া বীজ দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন। প্রয়োজনে পানিও যোগ করতে পারেন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে খেয়ে নিন।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি ভাল খাবারের এই উপকারিতার সাথে অপকারিতাও জড়িত থাকে। তেমনি চিয়া সিডেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন চিয়া সিডের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই:
- বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়া প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
- চিয়া সিড বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ চিয়া বীজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই অল্প পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়া উচিত। আর স্বাস্থ্য সমস্যা মনে হলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যেতে পারে।
- চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ান সম্ভাবনা থাকে।