Honey, Organic Groceries

সুন্দরবনের বিভিন্ন ফুলের প্রাকৃতিক চাকের মধুর বৈশিষ্ট্য

সুন্দরবনের মধুর উপকারিতা ও গুণাবলী:

আমাদের দেশে যত ধরণের মধু পাওয়া যায় তার মধ্যে যদি আমরা অর্গানিক বা শতভাগ প্রাকৃতিক মধু বলতে পারি তা হলো সুন্দরবনের বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহীত প্রাকৃতিক চাকের মধু। এই মধু শুধুমাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকেই আহরণ করা যায়। তবে চাহিদা অনুসারে এর যোগানের স্বল্পতা থাকায় এই মধুর দাম যেমন সবথেকে বেশি তেমনি এই মধুতে ভেজালও হয় সবচেয়ে বেশি।

সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু

সুন্দরবনের মধু প্রাকৃতিক চাকের শতভাগ অর্গানিক মধু। এই মধু শতভাগ অর্গানিক হওয়ার পিছনের যথেষ্ট কারণ রয়েছে কেননা মৌয়ালিরা যে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে সেই চাক সম্পূর্ণ ভাবে প্রাকৃতিক, এবং মৌমাছি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু আহরণ করে গাছে গাছে চাক বাঁধে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে খলিশা ফুলে ভরে ওঠে সুন্দরবন।

খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য 

  • খলিশা ফুলের মধুকে বলা হয় সুন্দরবনের আশীর্বাদ।
  • সুন্দরবন ছাড়া এই মধু সারাদেশে অন্য কোথাও আহরণ করা যায় না।
  • দেখতে সাদা, গাঢ় ও অনেক বেশি মিষ্টি
  • খলিশা ফুলের গাছকে বলা হয় ‘হানিপ্লান্ট’
  • খলিশা গাছ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশি পাওয়া যায়।
  • মৌমাছি খলিশা ফুলের নির্জাস সংগ্রহ করে । ঠিক ওই সময়ে যে মধু মৌয়ালরা সংগ্রহ করে সেটাই প্রাকৃতিক চাকের খলিশার ফুলের মধু।

Sundarban Crown (Khalisha) Flower Honey- সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু

In stock

৳ 400৳ 770
Select options This product has multiple variants. The options may be chosen on the product page

সুন্দরবনের কেওড়া ফুলের মধু

সুন্দরবনে কয়েকটা ফুলের মধু পাওয়া যায় তার মাঝে কেওড়া ফুলের মধু অন্যতম। সুন্দরবনের নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায় তবে লবণাক্ত ভূমিতে বেশি জন্মে। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Sonneratia apetala। এই গাছটি প্রায় ২.৫ মিটার থেকে ২০ মিটার লম্বা হতে পারে।

আমাদের দেশে এই গাছ সুন্দরবনসহ বিষখালী ও বলেশ্বর নদ ঘেঁষা সবুজ বেষ্টনীর অংশ হয়ে ঘিরে রেখেছে সমুদ্র উপকূল। কেওড়া ফল হরিণ এবং বানরের অনেক পছন্দের খাবার তাই এই গাছের নিচে হরিণের দল দেখা যায়। এই গাছের ফুল গুলো হয় ছোট ছোট হলুদ বর্ণের। উভলিঙ্গের এ ফুল থেকে আমার কেওড়া মধু পেয়ে থাকি।

সাধারণত এপ্রিলের শেষের দিকে কেওড়া ফুল ফোটে  এই সময় কেওড়া ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়।

কেওড়া ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য 

  • কেওড়া ফুলের মধু অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন ৷
  • এই মধুতে জলীয় অংশ (Moisture) বেশি (প্রায় ২৬%) থাকার কারণে অন্যান্য মধু থেকে অনেক পাতলা হয়৷
  • এই মধু কিছুটা হলদে বর্ণের হতে পারে কারণ কেওড়া ফুল হলদে বর্ণের হয়ে থাকে।
  • মধুর পাত্রের গায়ে গাঁদ জমে যেতে পারে কারণ এগুলা মৌয়ালদের হাতের কাটা মধু৷
  • কাঁচা মধু বিধায় পাত্রের মধ্যে হালকা গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে৷
  • ঝাঁকি লাগলে ফেনা হয় এবং বুদ্‌বুদ (Air Bubble) সৃষ্টি হয়৷
  • pH মাত্রা বেশি থাকার কারণে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া/ঈস্ট সক্রিয় হতে পারেনা৷

সুন্দরবনের বাইন ফুলের মধু

সুন্দরবনের একটি অতি পরিচিত গাছ হচ্ছে বাইন। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Avicennia Officinalis Linn। বাইন গাছ সাধারণত সুন্দরবনের নদীর ধারে কিংবা বনের গহীনে ভিতরে নীচু এলাকায় জন্মায়। এই গাছ সাধারণত ১৩ মি. থেকে ২০ মি. উঁচু এবং ৪-৫ মি. বেড় হয়ে থাকে। 

এই গাছ সুন্দরবনে একক ভাবে জন্মে থাকে। তবে কখনো কখনো কেওড়াও গোলপাতার সাথে দেখা যায়। এছাড়াও নতুন মাটি হলেই খাল, নদীর ধারে বা চরে বাইন জন্মে থাকে। এই গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না এটা বেশির ভাগ জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত আষাঢ় মাসে বাইন গাছের ফুল ফোটে , শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাসে এর ফল পাকে। বাইন গাছের ফুলের রং সাধারণত কমলা হলুদ বর্ণের এবং ১০-১২ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। 

যেহেতু আষাঢ় মাসে বাইন গাছের ফুল ফোটে তাই বাইন ফুলের মধু আহরণ শুরু হয় আষাঢ় মাস থেকেই। এই সময় মৌয়ালদের মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে চলে যায়। এ মধু খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।

বাইন ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য 

  • বাইন ফুলের মধু সহনীয়, মিষ্টি ও ঝাঁঝালো, খলিশা মধুর মতো অত কড়া না।
  • হালকা রং ও পাতলা হয়ে থাকে।
  • এই মধু ফ্রিজে রাখলে জমাট বাঁধে না।
  • একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে।

সুন্দরবনের গরান ফুলের মধু

গরান ঝোপ জাতীয় জ্বালানি কাঠের চিরসবুজ গাছ। আর বৈজ্ঞানিক নাম  Ceriops decandra (Grift), Ding How।  এই গাছের গড় উচ্চতা ৪-৮ মিটার, পাতা বিপরীত, পুরু ও উজ্জ্বল। ফুল ছোট, বৃতি ৫টি খণ্ডে বিভক্ত। ফল সরু, সবুজ বর্ণের এবং ১২ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। গরান অধিক লবণাক্ত অঞ্চলে ভাল জন্মে। তবে সুন্দরবন ও চকরিয়া সুন্দরবন এলাকায় বেশি দেখা যায় এই গাছ। গরানের প্রাকৃতিক বংশ বিস্তার সফলভাবে হয়ে থাকে বিধায় নার্সারি ও বাগান সাধারণত করা হয় না। 

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পর পরই খলিশা ফুলের সিজন শেষ হয়ে যায়, এরপরই ফোটে গড়ান ফুল। এই সময় মৌমাছি যে মধু আহরণ করে তাই গড়ান ফুলের মধু। গড়ান ফুলের মধু দেখতে একটু লালচে, গাঢ় ও অনেক বেশি মিষ্টি হয়।

গরান ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য 

  • গরান ফুলের মধু পাতলা হয় এবং বুনো ঘ্রাণ থাকে।
  • লালচে বাদামি রং এবং সামান্য ঘোলা হয়।
  • স্ফটিকায়িত হতে দেখা যায় না।
  • মধুর উপরের অংশে পোলেনের পুরু স্তর দেখা যায়।

অনেকে খাঁটি মধু পরীক্ষা করার ঘরোয়া কিছু কৌশল ব্যবহার করে মধু বিক্রি করে, মূলত খাঁটি মধু চেনার উপযুক্ত কোনো নিয়ম নেই ল্যাব টেস্ট ছাড়া। তাই অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বোকা বানিয়ে আপনাদের কাছে মধু বিক্রি করে। তাই খাঁটি মধু কিনতে হলে অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মধু ক্রয় করতে হবে।

আরো জানুন আমরা মধুর গ্রেড বলতে আসলে কি বুঝি?

                   মধু তরল না স্ফটিক-ব্যাপারটা কি? ড. মোঃ লতিফুল বারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *